৭১’র রনাঙ্গনের লড়াকু সৈনিক আপন দুই ভাই শেখ সামছুদ্দিন ও শেখ সোহরাব উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধের এতগুলো বছরেও পাইনি রাষ্ট্রীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধা ভাতা। ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে দেশপ্রেমিক দুই ভাই কলম কথাকে বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের জন্মস্থান পাইকগাছার দুর্গাপুর ক্যাম্পে।
তৎকালীন ক্যাম্প কমান্ডার আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধে যেতে হয়েছে। তবে বেশিরভাব সময় দূর্গাপুর ক্যাম্প থেকে হাতিয়ারডাঙ্গা হেড ক্যাম্পে ডিউটিও করতে হয়েছে। পাইকগাছার হাতিয়ারডাঙ্গা সেক্টর ৩ এর কমান্ডার বাবর সাহেবের নেতৃত্বে, দেশকে ভালােবেসেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম মুক্তির সংগ্রামে, জীবন বাজি রেখে লড়েছি, একাধিক সম্মুখুন যুদ্ধে’, পরিকল্পনা করে সহযােদ্ধাদের সাথে নিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছি একের পর এক পাক হানাদার বাহিনীর আস্তানা।
শুত্রু মুক্ত করে ছিনিয়ে এনেছি আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু জুটেনি তাদের ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। শেখ সোহরাব উদ্দিন আফসােস করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি৷ যুদ্ধের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং পাকবাহিনী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। অথচ সেই সম্মান পাইনি।
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আজো জুটেনি কপালে ৷ অথচ যারা ভুয়া যোদ্ধা তারা পাচ্ছে ভাতা! আর আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পাচ্ছি না। সাধারন মুক্তিযােদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সম্মানীয় ভাতা আমরা পাই নাই।
শেখ সামছুদ্দিন বলেন, আমাদের সকল কাগজপত্র ঢাকার কাকরাইল মুক্তিযোদ্ধা অফিসে প্রমাণস্বরূপ নিয়ে দিনের পর দিন মাসের-পর-মাস ঘুরেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে আমরা খুব কষ্টে দিন যাপন করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই , বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ আমাদের ন্যায্য পাওনা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা যেন আমরা পাই তার সুব্যবস্থা করুন।
পুলিশের চকারিতে ৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করে শেখ সোহরাব উদ্দিন।পূর্ণাঙ্গ ভাবে চাকরি করে ঢাকা পুলিশ লাইনে নিজে থেকেই অব্যহতি দিয়েছে এবং পেনশনও পাচ্ছে। শেখ সামছুদ্দিনও পুলিশে যোগাদান করে ৭৩ এ চাকরি ছেড়ে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন থেকে চলে আসেন।
কিন্তু দুই দেশপ্রেমিক আপসোস করে বলেন, আমাদের ন্যায্য পাওনা যেটা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ও গেজটভুক্ত হওয়ার সুবিধা আমরা পেতে চাই।
যুদ্ধের পরে ৭৩ সালে বড় ভাই শেখ সামছুদ্দিন পরিবার টিকিয়ে রাখতে মণিরামপুরে আসেন এবং অস্থায়ী ভাবে এখনো পর্যন্ত মণিরামপুরে অবস্থান করছেন।
ছোট ভাই শেখ সোহরাব উদ্দিন চাকুরির সুবিধার কারণে সামন্য কিছু করতে পারলেও সংসার চালানো দায় তিনিও ২০০১ সালে এসে মণিরামপুরের হাকোবা গ্রামে বসবাস করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।